ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের বিষমুক্ত শুটকির কদর বাড়ছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: দেশের বৃহত্তম শুটকি পল্লী কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেকসহ জেলার সমুদ্র তীরবর্তী বালুচরে এখন পুরোদমে শুটকি উৎপাদন চলছে। সম্প্রতি শুটকিপল্লীগুলোতে অর্গানিক শুটকি তৈরির কারখানা গড়ে ওঠায় বিষমুক্ত শুটকির চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।

সাগর থেকে ধরে আনা প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ সূর্যের তাপে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুটকি। গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে শুটকি উৎপাদন কিছুটা বিঘ্নিত হলেও এখন অনুকূল আবহাওয়া ও সূর্যালোকের কারণে জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হচ্ছে। সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠেছে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অর্গানিক শুটকি তৈরির কারখানাও। এক সময় কেবল সাগরে মাছধরা নৌকাতে শুকানো হত এই ধরনের শুটকি, যেখানে বাড়তি কিছুই ব্যবহার করা হত না। সাগরের মতোই একই কায়দায় এখন অর্গানিক শুটকি তৈরি করা হচ্ছে শহরে। বিশেষ করে এই বিষমুক্ত শুটকির চাহিদা দিনদিন বাড়ছে স্থানীয়দের কাছে। শুটকিতে বিষ মেশানোর কারণে যারা শুটকি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন তারাও এখন সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর শুটকির স্বাদ আস্বাদন করছেন।

শহরের নাজিরারটেকের সমুদ্র তীরবর্তী বালুচরের প্রায় ১০০ একর জমিতে গড়ে ওঠেছে দেশের বৃহত্তম শুটকি পল্লী। এখানে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই নারী। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে (নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত) নাজিরারটেকসহ জেলার উপকূলীয় জেলেপল্লীসমূহে শুটকি উৎপাদন চলে। তবে বৃষ্টি না থাকলে বছরের অন্যান্য সময়েও কিছু শুটকি উৎপাদন হয়। সাগরের বালিয়াড়িতে বিশেষ উপায়ে তৈরি বাঁশের মাচার উপর কাঁচা মাছ সূর্যের তাপে ৩/৪ দিন শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুটকি। এরপর উৎপাদিত শুটকিগুলো পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। শহরের নাজিরারটেক ছাড়াও মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়াসহ জেলার উপকূলীয় সৈকতে শুটকি উৎপাদন হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি মৌসুমে নাজিরারটেক শুটকি মহালে মাছের গুঁড়াসহ ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা। উৎপাদিত এসব শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। জেলার অন্যান্য এলাকাতেও নাজিরারটেকের প্রায় সমপরিমাণ শুটকি উৎপাদিত হয়।

জেলা মৎস্য কর্মকতা মো. বদরুজ্জামান বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা বিশেষ জাতের ছোট আকৃতির মাছগুলো দিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। এখানে উৎপাদিত শুটকি শুধু কঙবাজারে নয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নাটোরসহ সারাদেশের মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে। এমনকি এখানে উৎপাদিত শুটকির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

নাজিরারটেক শুটকি মহালের ব্যবসায়ী মো. নুরুদ্দিন কোম্পানি জানান, এখানে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা ও নাইল্যা মাছসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছের শুটকি তৈরি করা হয়। বর্ষাকালে টানা বৃষ্টির সময় ছাড়া বছরের ৬/৮ মাস এখানে শুটকি উৎপাদন চলে। আর ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত এখানে প্রতিদিন গড়ে দুইশ থেকে আড়াইশ মেট্রিক টন করে শুটকি উৎপাদিত হয়।

নাজিরারটেক শুটকি ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আমানউল্লাহ জানান, দেশের বৃহত্তম এ শুটকি মহাল থেকে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায়। পরিকল্পিতভাবে শুটকি মহালটির উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করলে এই খাত থেকে রাজস্ব আয় অনেক বাড়বে।

পাঠকের মতামত: